সংবাদ শিরোনাম

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

 প্রকাশ: ৩০ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন   |   লাইফস্টাইল

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

ডায়াবেটিস এখন একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এবং সচেতনতা অবলম্বন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এখানে আমরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস বিস্তারিত আলোচনা করবো।

১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

শর্করা নিয়ন্ত্রণ করুন: সাদা ভাত, পরিশোধিত ময়দা, মিষ্টি খাবার, সফট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়।আঁশযুক্ত খাবার খান: শাকসবজি, ফল, ডাল, গোটা শস্যজাতীয় খাবার (ওটস, লাল চাল, আটার রুটি) খেলে রক্তে শর্করা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।প্রোটিনের উৎস গ্রহণ করুন: মাছ, ডিমের সাদা অংশ, ডাল, মসুর, মুগ, সয়াবিন এবং লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া উচিত।ভালো চর্বি বেছে নিন: অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, বাদাম, কাজু, আখরোট ও তিলের তেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।ছোট ছোট ভাগে খাবার খান: একসাথে বেশি খাওয়ার পরিবর্তে দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করা:

শারীরিক ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা (Brisk Walking) করলে রক্তে শর্করা কমে।হালকা দৌড়, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম, সাঁতার বা নাচও ভালো ব্যায়াম।ব্যায়াম করার ফলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে, অর্থাৎ শরীর ইনসুলিন ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে।ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা:

অতিরিক্ত ওজন (Obesity) ডায়াবেটিসের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।শরীরের অতিরিক্ত মেদ, বিশেষ করে পেটের মেদ ইনসুলিন প্রতিরোধ (Insulin Resistance) বাড়ায়।ওজন ৫-১০% কমালেই রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নেই।

৪. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা:

অল্প ঘুম বা অনিয়মিত ঘুম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা।ঘুমের অভাবে শরীরে স্ট্রেস হরমোন (Cortisol) বেড়ে যায়, ফলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পায়।প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম জরুরি।রাতে দেরি করে জেগে থাকা এবং মোবাইল বা টিভি স্ক্রিন বেশি দেখা ঘুমের মান নষ্ট করে, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর।

৫. মানসিক চাপ (Stress) কমানো:

মানসিক চাপও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করে।মানসিক চাপের কারণে শরীরে হরমোন পরিবর্তন হয়, যা রক্তে শর্করা বাড়ায়।স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Breathing Exercise) এবং বই পড়া খুব উপকারী।নিয়মিত হাঁটা ও প্রিয় কাজ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়।

৬. নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা:

নিজের রক্তে শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।ফাস্টিং ব্লাড সুগার, পোস্ট প্র্যান্ডিয়াল সুগার (খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর), এবং HbA1c টেস্ট করে জানা যায় ডায়াবেটিস কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে।বাড়িতে গ্লুকোমিটার ব্যবহার করলে প্রতিদিন শর্করার মাত্রা জানা সম্ভব।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করলে ঝুঁকি কমে।

৭. ঔষধ ও ইনসুলিন সঠিকভাবে গ্রহণ করা:

অনেক সময় খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের পাশাপাশি ঔষধ বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।ডাক্তার যা পরামর্শ দেন, তা নিয়মিত ও সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে।ঔষধ বাদ দেওয়া বা সময়মতো না খাওয়া রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।নিজে থেকে ঔষধ পরিবর্তন বা বন্ধ করা বিপজ্জনক।

৮. ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ানো:

ধূমপান ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এটি হৃদরোগ, কিডনি ও চোখের ক্ষতি বাড়ায়।অ্যালকোহল রক্তে শর্করার ওঠানামা করে, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিপজ্জনক।তাই ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে এড়ানো উচিত।

৯. পর্যাপ্ত পানি পান করা:

শরীরে পানির অভাব হলে রক্তে শর্করার ঘনত্ব বেড়ে যায়।দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।কোমল পানীয়, কোল্ড ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক ইত্যাদি বাদ দিয়ে সাধারণ পানি খাওয়া উচিত।ডাবের পানি বা লেবুর শরবতও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো (চিনি ছাড়া)।

১০. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা:

ডায়াবেটিস শুধু রক্তে শর্করার সমস্যা নয়, বরং এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপরও প্রভাব ফেলে।বছরে অন্তত একবার চোখ, কিডনি, দাঁত ও হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা উচিত।রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

এসব পরীক্ষা না করলে জটিলতা অনেক সময় হঠাৎ দেখা দেয়।

অতএব,ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। ওষুধ বা ইনসুলিন ছাড়াও জীবনধারার পরিবর্তনই এখানে মূল চাবিকাঠি।

 তাই আজ থেকেই ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু করুন— যেমন খালি ক্যালোরি খাবার এড়িয়ে চলা, প্রতিদিন হাঁটা, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং সময়মতো ঘুমানো। নিয়মিত এসব অভ্যাস গড়ে তুললে ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে, জটিলতা কমবে এবং জীবন হবে সুস্থ ও সুন্দর।