টেকসই ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ মৎস্যখাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ - মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

উখিয়া (কক্সবাজার), ৬ আশ্বিন (২১ সেপ্টেম্বর):
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অ্যাকুয়াকালচার শিল্প অনেকটাই ফিডের ওপর নির্ভরশীল তাই ফিডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ ফিড ব্যবহার করা মানেই নিরাপদ মাছ। এটি শুধু মাছের উৎপাদন নয় বরং টেকসই ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ কক্সবাজারে উখিয়ার ডেরা রিসোর্টে নেদারল্যান্ডস দূতাবাস ও ফিসটেক বিডি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ‘অ্যাকুয়াকালচার সেন্টার অব এক্সিলেন্স’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন এবং মানুষের জীবিকার বিষয়গুলোকে অগ্রধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, শুধু কত টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে তা নয় বরং কতজন মানুষ এই খাতে যুক্ত রয়েছে—এটাই প্রকৃত সূচক। মৎস্যখাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বোঝার জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এ খাতে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, টেকসই বলতে শুধু শিল্পে কীভাবে টিকে থাকা যায় তা নয় বরং পরিবেশ রক্ষা, মানুষের জীবিকা নিশ্চিত এবং সমাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন, এই সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে তরুণ প্রজন্ম সমাজে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে। আমি মনে করি অ্যাকুয়াকালচারে তরুণ প্রজন্মের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি, যাতে তারা আগ্রহী হয় এবং ভালো আয় ও টেকসই কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা দেখতে পায়, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক, উচ্চ উৎপাদনশীল, ও টেকসই মাছ চাষের পদ্ধতি হিসেবে আইপিআরএস (IPRS: In-Pond Raceway System) বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এ প্রযুক্তি নিয়ে আয়োজকরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রযুক্তিনির্ভরতার পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থাও রাখতে হবে, ভবিষ্যতের জন্য এটিও প্রয়োজন হতে পারে।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত Joris van Bommel। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ফুডটেক বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় প্রতিষ্ঠিত অ্যাকুয়াকালচার সেন্টার অব এক্সেলেন্স বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের অংশীদারিত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই কেন্দ্র সরকারি ও বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন সহযোগীদের একত্রিত করে জ্ঞান বিনিময়, আধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শন এবং সর্বোপরি কৃষক ও মৎস্যচাষিদের সহায়তা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুর রউফ। অনুষ্ঠানে ফিশটেকের চেয়ারম্যান খন্দকার ফরহাদ হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচার উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের ভিশন তুলে ধরেন। লারিভ ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্পের ব্যবস্হাপক Rogier Bector মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক এস. এম. রেজাউল করিম, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের প্রথম সচিব (অর্থনীতি বিষয়ক) Tim Spaans, প্রথম সচিব (মানবিক ও জেন্ডার বিষয়ক) Jan Swillens, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সি-ফুড প্রসেসিং ও অ্যাকুয়াকালচার খাতের উদ্যোক্তা, মৎস্যচাষিসহ অন্য অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপদেষ্টা কক্সবাজারের কলাতলীতে মৎস্য অধিদপ্তরের কাঁকড়া হ্যাচারি ও নার্সারি কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের পিসিআর ল্যাব ও নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলোও ঘুরে দেখেন।