চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষক আবদুল করিম বলেন, এখন বিনার ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) উদ্ভাবিত ধান ও অন্যান্য ফসলের জাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ও রোগ-সহনশীল এসব জাতের কারণে কৃষকের আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি খাদ্য উৎপাদনেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে খরার কারণে কৃষকরা দীর্ঘদিন লোকসানের মুখে পড়তেন। তবে বিনার উদ্ভাবিত ধানের জাত বিনা-১৯ ও ২১ ধান কম সময়ে ফলন দেয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধে সক্ষম হওয়ায় কৃষকের ঝুঁকি অনেকটা কমে গেছে।
ইতোমধ্যেই এই জাতের ধান বরেন্দ্র অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘায় ফলন বাড়ছে, খরচ কমছে। এতে জীবিকা সহজ হচ্ছে এবং বাজারে ধানের সরবরাহও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিনার গবেষকরা জানিয়েছেন, নতুন এসব জাত সেচ ও সারের সাশ্রয় করে চাষ করা সম্ভব। এতে উৎপাদন খরচ কমে আসছে এবং জমির উর্বরতাও বজায় থাকছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষক আবদুল করিম বলেন, আগে মৌসুম শেষে লোকসান গুনতে হতো। এখন বিনার ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছি। ফসল ভালো হচ্ছে, দামও পাচ্ছি।
গোমস্তাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান চলতি বছর বিঘা প্রতি ২০/২৫ মন ধান উতপাদন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিনার উদ্ভাবিত এসব জাত জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি টেকসই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে আগামী দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী অবস্থানে যাবে।
নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডি অন্চলের কৃষক আব্দুল জাব্বার বলেন বিনাধান-২৫ ও বিনাধান-২৬-কম সময়ে ফলন দেয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধে সক্ষম হওয়ায় কৃষকের ঝুঁকি অনেকটা কমে গেছে। জেলার গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় ইতোমধ্যেই এই জাতের ধান জনপ্রিয়।
তিনি আরও বলেন, কৃষকরা জানাচ্ছেন, প্রতি বিঘায় ফলন বাড়ছে, খরচও কম।তিনি চলতি বছর পরীক্ষামুলক ভাবে পাঁচ বিঘা জমিতে বিনা ২৫ ও ২৬ ধান লাগিয়েছিলেন। তিনি এ বছর ১২০ মন ধান উতপাদন করেছেন।
নাচোলের কৃষক মো: কাজল বলেন, আগে খরার কারণে ধান নষ্ট হয়ে লোকসান গুনতে হতো। কিন্তু এখন বিনার ধান রোগ-বালাই কম ধরে এবং খরায়ও ভালো ফলন দেয়। এতে জমির ক্ষতি কমছে, ঝুঁকিও হ্রাস পেয়েছে। নিয়মিত ফলন পাওয়ায় পরিবারে স্বচ্ছলতা আসছে এবং কৃষিকাজে আগ্রহ বাড়ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর জেলায় বিনার বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে। যারা গত বছরের তুলনায় অন্তত ৫০০ হেক্টর বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে৷ ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে কৃষকদের বিকল্প ফসল চাষাবাদে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে৷ এই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে চাষাবাদ উপযোগী ধানের ফসল হতে পারে বিনা-১৯ ও বিনা-২১ ধান। কারন এই জাতের ধান তুলনামূলক কম পানিতে চাষাবাদ করা যায়। এছাড়াও এই জাতটি অপেক্ষাকৃত খরা সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় বাড়তি সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বীনা) চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসের প্রধান নির্বাহী কৃষিবিদ ড. আজাদুল হক (আজাদ) বলেছেন, রুক্ষ মাটির উপযোগী করে উদ্ভাবিত চারটি নতুন ধান জাত স্বল্প সেচ ও স্বল্প সার ব্যবহার করেই চাষ করা যায়। এতে কৃষি খরচ কমে আসে, মাটির উর্বরতা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করে। এসব নতুন জাতের বিস্তারে টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও দৃঢ় অবস্থান তৈরি করবে।