সংবাদ শিরোনাম

ধৈর্যশীলদের জন্য জান্নাত — কোরআনের আলোকে আটটি শিক্ষা

 প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন   |   ইসলামী জীবন

ধৈর্যশীলদের জন্য জান্নাত — কোরআনের আলোকে আটটি শিক্ষা

ধৈর্য একটি মহান গুণ, যা মানবজীবনের প্রতিটি ধাপে অপরিহার্য। কোরআনুল কারিমে ধৈর্যের গুরুত্ব বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন, তাদের ভালোবাসেন এবং ধৈর্যশীলদের জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন। নিচে কোরআনের আলোকে ধৈর্য ধারণ করার আটটি শিক্ষা  মধ্যে তুলে ধরা হলো:

১. ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আল্লাহ থাকেন

আয়াত:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”(সূরা বাকারা ২:১৫৩)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাঁর সঙ্গে থাকেন, তাঁকে সাহায্য করেন এবং তাঁর পথনির্দেশনা দেন। এই শিক্ষা আমাদের শিখায়, কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।

আরো পড়ুন-সূরা ফাতিহা’র শানে নুযুল ও তাফসিরসহ ব্যাখ্যা

২. ধৈর্যশীলদের পুরস্কার সীমাহীন

আয়াত:

“ধৈর্যশীলদের তাদের প্রতিফল পরিপূর্ণরূপে ও অগণিতভাবে দেওয়া হবে।”(সূরা যুমার ৩৯:১০)

এই আয়াত আমাদের জানান দেয়, ধৈর্য শুধুমাত্র মানসিক শক্তির চর্চা নয়, বরং তা একটি ইবাদত যার জন্য আল্লাহ সীমাহীন পুরস্কার রাখেন। আমরা যখন বিপদে পড়েও ধৈর্য ধরি, তখন আল্লাহ আমাদের জন্য অপার প্রতিদান প্রস্তুত করেন।

৩. ধৈর্য ও সালাত একসাথে চর্চা করো

আয়াত:

“হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।”(সূরা বাকারা ২:১৫৩)

এই আয়াতে ধৈর্য এবং নামাজকে একসাথে বলা হয়েছে। কারণ, নামাজ ধৈর্যধারণে সহায়তা করে। কেউ যখন দুঃখ-কষ্টে পড়ে, তখন সে যেন নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় ও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে।

৪. নবীগণ ধৈর্যের সর্বোচ্চ উদাহরণ

আয়াত:

“তুমি তাদের কথা ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য কর এবং আমার বান্দা দাঊদকে স্মরণ কর। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতি অধিক অনুগত।”(সূরা ছাদ ৩৮:১৭)

নবীদের জীবনে ধৈর্যের বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাই। বিশেষত নবী আইয়ুব (আ.), যাঁর সমস্ত ধনসম্পদ, সন্তান ও স্বাস্থ্য হারানো সত্ত্বেও তিনি কখনো আল্লাহর প্রতি অভিযোগ করেননি। বরং ধৈর্য ধরে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থেকেছেন।

৫. বিপদের সময় ধৈর্য আল্লাহর প্রিয় কাজ

আয়াত:

“যখনই তাদের কোনো বিপদে পতিত করা হয়, তখন তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী।’”(সূরা বাকারা ২:১৫৬)

এই আয়াত ধৈর্যের একটি দোয়া হিসাবে পরিচিত। বিপদের সময় এ দোয়া পাঠ করলে মানুষ মনে করে যে, সব কিছু আল্লাহর হুকুমেই ঘটে, এবং তার প্রতিফলও আল্লাহর কাছ থেকেই আশা করা উচিত।

৬. শত্রুর মোকাবেলায় ধৈর্য ও আত্মসংযম অপরিহার্য

আয়াত:

“যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং আত্মসংযম দেখাও, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”(সূরা আলে ইমরান ৩:১২০)

এই আয়াত শিক্ষা দেয়, শত্রু বা বিপদ যতই প্রবল হোক, যদি আমরা ধৈর্য রাখি ও সঠিক পথে অবিচল থাকি, তবে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন। প্রতিহিংসার পরিবর্তে ধৈর্য ও প্রজ্ঞা আমাদের শক্তি হওয়া উচিত।

৭. ধৈর্যশীলরা জান্নাতের উত্তরাধিকারী

আয়াত:

“তারা ধৈর্যের কারণে জান্নাত লাভ করবে এবং সেখানে অভ্যর্থিত হবে সালাম ও শান্তির মাধ্যমে।”(সূরা ফুরকান ২৫:৭৫)

এই আয়াতে ধৈর্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যারা দুনিয়ার জীবনে কষ্ট সহ্য করে, অন্যায় না করে, ঈমান ও আমলের ওপর অটল থাকে, তারা পরকালে জান্নাত লাভে ধন্য হবে।

৮. ধৈর্য একটি ব্যক্তিত্বের পরিচয়

আয়াত:

“তুমি ধৈর্য ধারণ করো, যেমন ধৈর্য ধারণ করেছেন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ নবীগণ।”(সূরা আহকাফ ৪৬:৩৫)

এখানে ধৈর্যকে একটি চরিত্রের গুণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব গঠন করতে ধৈর্য অপরিহার্য। যারা সবকিছুতে তাড়াহুড়া করে বা রেগে যায়, তারা অস্থির হয়ে পড়ে। কিন্তু ধৈর্যশীলরা সব পরিস্থিতি সামলে নিতে সক্ষম হয়

ধৈর্য শুধু দুঃখ-কষ্টে নয়, সুখেও দরকার:ধৈর্য কেবল কষ্ট সহ্য করার জন্য নয়; সুখের সময়ও ধৈর্য দরকার যাতে আমরা অহংকারী না হই।

ধৈর্যশীলতা পরিবার ও সমাজে শান্তি আনে: যদি স্বামী-স্ত্রী, পরিবার বা সমাজের সদস্যরা ধৈর্যশীল হয়, তবে ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা ও বিদ্বেষ অনেকটাই কমে যায়।

ধৈর্য অর্জনের জন্য কোরআন পড়া ও তাফসির জানা দরকার: আল্লাহর কাহিনিগুলো, যেমন নবীদের কষ্ট ও ধৈর্যের কাহিনি পড়লে আমাদেরও ধৈর্য ধরে চলার শক্তি আসে। ধৈর্য মানব জীবনের এক অপরিহার্য শিক্ষা, যা কোরআনের প্রতিটি অধ্যায়ে ছড়িয়ে আছে। একজন মুমিনের সৌন্দর্য ধৈর্যের মধ্যে নিহিত। ধৈর্য শুধু দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় না, বরং পরকালে জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেয়। কাজেই আমাদের উচিত, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা—কঠিন সময়ে, অন্যায়ের সামনে, সাফল্যের প্রতীক্ষায় এবং মানুষের সাথে আচরণে।

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধারণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এই গুণকে আমাদের জীবনের একটি স্থায়ী অংশ বানিয়ে দেনআমিন।