সংবাদ শিরোনাম

তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত

 প্রকাশ: ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৫৬ অপরাহ্ন   |   ইসলামী জীবন

তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। এটি রাতের গভীর সময়ে আদায় করা হয়। আল্লাহ তাআলা নিজে এ নামাজের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং রাসুল (সা.) নিয়মিত এটি আদায় করতেন। এটা এমন একটি ইবাদত, যা শুধু আল্লাহ ও বান্দার মাঝে ঘটে — সম্পূর্ণ নির্জনে, গভীর হৃদয়ের আবেগে।

কুরআনের আলোকে তাহাজ্জুদের ফজিলত

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বলেন:  "وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّك مَقَامًا مَّحْمُودًا"(সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৭৯)

অর্থ: ““রাত্রির কিছু অংশে কুরআনসহ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করো, এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত (নফল) ইবাদত। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে ‘মাকাম মাহমুদ’ (প্রশংসিত মর্যাদা) দান করবেন।”এই আয়াতটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নির্দেশনা দিলেও এর ফজিলত সকল মুমিনের জন্য প্রযোজ্য।

হাদিসের আলোকে তাহাজ্জুদের ফজিলত ,রাসূল (সা.) বলেন:"সর্বোত্তম নামাজ, ফরজ নামাজের পরে রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।"— (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৩)

"আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন: ‘কে আছো আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছো, আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আছো, ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?’"— (বুখারী ও মুসলি 

এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, তাহাজ্জুদ এমন একটি সময়ের নামাজ, যেখানে আল্লাহ নিজেই বান্দার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকেন।

তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্ব ও প্রভাব

১. আল্লাহর নৈকট্য লাভ:তাহাজ্জুদ এমন সময় আদায় হয়, যখন সবকিছু ঘুমিয়ে থাকে। এই নির্জন মুহূর্তে বান্দা যদি আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়, তবে তাঁর দয়া ও রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া অসম্ভব। ২. গুনাহ মাফের সুযোগ:তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর কাছে অশ্রুভেজা চোখে মাফ চাইলে, তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ৩. আত্মশুদ্ধি ও ইমান বৃদ্ধি:গভীর রাতে ইবাদত করলে হৃদয় নরম হয়, আত্মা বিশুদ্ধ হয় এবং ঈমান দৃঢ় হয়। ৪. দুনিয়াবি সমস্যার সমাধান:অনেক আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি বলে গেছেন — "যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের অভ্যাস করে, তার দুনিয়ার সমস্যাও সহজ হয়ে যায়।"৫. রিযিক বৃদ্ধি ও বরকত:ইমাম শাফি (রহ.) বলেন, “তাহাজ্জুদের বরকতে রিযিক বাড়ে।”

সাহাবাদের ও সালাফদের আমল :হজরত উমর (রা.) রাতে পোষাক পড়ে নিতেন যেন তাহাজ্জুদের নামাজ মিস না হয়।হজরত আলী (রা.) বলতেন, "রাতের নামাজই হলো মুমিনের সম্মান।"হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, "রাতের নামাজের আনন্দ যারা পেয়েছে, তারা জানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শান্তি কী।"

তাহাজ্জুদের নিয়ম ও সময়:ইশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজরের আজানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।সর্বোত্তম সময়,রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, যেমন যদি রাত ৯টা থেকে ৫টা হয়, তাহলে ৩টা থেকে ৫টা।

রাকাত সংখ্যা:সাধারণত ২ থেকে ৮ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। রাসূল (সা.) কখনো ১১ রাকাত আদায় করতেন।পদ্ধতি: দুই রাকাত করে সালাম ফেরাতে হয়।শেষে দীর্ঘ দোয়া করা যায়।

তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে উঠার কৌশল: ১. রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো। ২. ঘুমানোর আগে নিয়ত করা: “আমি তাহাজ্জুদের জন্য উঠবো।”৩. মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করা।৪. কেউ থাকলে বলুন যেন জাগিয়ে দেয়।৫. মনের মধ্যে এই উপলব্ধি রাখা: আল্লাহ আমাকে ডাকবেন

দোয়া কবুলের বিশেষ সময়:

তাহাজ্জুদ এমন সময় হয়, যখন দোয়া কবুলের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। হাদিসে এসেছে: "তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেয়া হয় না, তাদের মধ্যে একজন হলেন তাহাজ্জুদের সময় দোয়া করনেওয়ালা।"— (আবু দাউদ) আধুনিক গবেষণায় তাহাজ্জুদের উপকারিতা

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে:রাতের নির্জনে ইবাদত করলে মস্তিষ্কের প্রশান্তি বাড়ে।মানসিক চাপ কমে, উদ্বেগ ও হতাশা কমে যায়।দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুবহে সাদিকের আগে উঠা স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

বাস্তবিক জীবনে উপকারিতা: যেসব মানুষ রাতের নামাজ পড়ে, তারা সাধারণত আত্মনিয়ন্ত্রণে পারদর্শী হয়।কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সহজে।বিপদে ধৈর্য ধরে, সফলতায় অহংকার করে না।দুনিয়া ও আখিরাতের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

ছোট ছোট অভ্যাসে শুরু করুন:১. এক রাকাত বিতর থেকে শুরু করুন।২. তারপর ২ রাকাত তাহাজ্জুদ। ৩. ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

অতএব, তাহাজ্জুদের নামাজ হলো এমন এক ইবাদত — যা শুধু নিষ্ঠাবানদের জন্য, যারা সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসে। এটি মুমিনের মর্যাদা, ক্ষমার দরজা, দোয়ার কবুল হওয়ার সময় এবং আত্মার প্রশান্তি।

যদি আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে চান, তাহলে তাহাজ্জুদের নামাজ হোক আপনার প্রতিদিনের অভ্যাস।