সংবাদ শিরোনাম

কানসাট জমিদার বাড়ির ইতিহাস

 প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন   |   জাতীয়

কানসাট জমিদার বাড়ির ইতিহাস

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নে কানসাট বাজারের সোনামসজিদ হাইওয়ে রাস্তা সংলগ্ন একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এটি ১৮শ থেকে ১৯শ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয় । যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সূর্যকান্ত, শশীকান্ত ও শীতাংশুকান্ত। জমিদাররা ব্রিটিশ আমলে তাদের জমিদারী প্রথার আওতায় কানসাট অঞ্চলে ভূমি শাসনকালীন সময়ে প্রশাসন, রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতেন। এই জমিদার পরিবারের আদি পুরুষরা প্রথমে বগুড়া জেলার কড়ইঝাকইর গ্রামে বসবাস করতেন।  দস্যু সরদার পণ্ডিতের অত্যাচারে তারা ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় স্থানান্তরিত হন এবং পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। 

স্থাপত্যশৈলী

১৮৬৭ সালে ময়মনসিংহের জমিদার সূর্যকান্ত চৌধুরী ২ দশমিক ২৪ একর জমির ওপর এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করেন। বাড়িটি মুঘল ও ইউরোপীয় উপাদানসমূহ-সহ মিশ্র স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয়। এছাড়া, ভবনটি দুই থেকে তিনতলা বিশিষ্ট এবং বেশ কয়েকটি অংশে বিভক্ত যার ১৬টি কক্ষ রয়েছে। ভবনের দক্ষিণ পাশে খোলা মাঠ, পুকুর, নাটমন্দির, অতিথিশালাদরবার হল আছে, যার কারুকার্যখচিত দরজা-জানালা ও ছাদে ছিল নান্দনিক অলঙ্করণ। দেশভাগের পর জমিদার শীতাংশুকান্ত ভারতে চলে গেলে বাড়িটি পাকিস্তান সরকারের অধীনে চলে যায় এবং পরবর্তীতে এটিকে বাংলাদেশ সরকার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে নেয়।    

সামাজিক ভূমিকা ও ইতিহাস

জমিদাররা শুধু ভূমি শাসনই করতেন না, বরং স্থানীয় সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। তবে ১৯৪০-এর দশকে হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে কিছু মুসলিম জনগণের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। মুসলিমরা জমিদারের কিছু অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে মামলাও দায়ের করেন। পরবর্তীতে জমিদার শীতাংশু বাবু ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। ৎ

এছাড়া, ১৯৪০ সালে জমিদারদের মুসলিম বিদ্বেষী আচরণের কারণে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়।  স্থানীয় মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে জমিদার শীতাংশু বাবু ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

বর্তমান অবস্থা

দেশভাগ এবং জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর জমিদার পরিবার এই অঞ্চল ত্যাগ করায় বাড়িটির অনেকাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত বা বিলুপ্তির পথে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণদশায় পড়েছে। কিছু অংশ স্থানীয়ভাবে সংরক্ষিত হলেও, পুরো ভবনটি ব্যবহৃারে অকার্যকর।   বাড়িটির দেয়ালজুড়ে ফাটলদরজা-জানালা চুরি হয়ে যাওয়ায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। 

পর্যটন সম্ভাবনা

জমিদার বাড়িটি এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে । এটিকে যদি এখনো সরকার সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটক প্রেমীকদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরতে পারে, তাহলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়ন হয়ে উঠবে একটি আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র। স্থানীয়রা মনে করেন, যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।