মরিচ চাষবাদের পদ্ধতি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা অনুসরণ করে কৃষকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ফলন পাচ্ছেন। ফলে
তাদের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।
উপযোগী মাটি ও জলবায়ু
মরিচ মূলত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফসল। হালকা দোআঁশ থেকে বেলে দোআঁশ মাটি মরিচ
চাষের জন্য উপযোগী। জমির pH মান ৫.৫ থেকে ৬.৫ হলে সর্বোত্তম ফলন
পাওয়া যায়।
জাত নির্বাচন
বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নত জাতের মরিচ চাষ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বারি
মরিচ-১, বারি মরিচ-২ (মধ্যম আকারের লম্বা ও ঝাল) বারি মরিচ-৩ (সবচেয়ে বেশি ঝাল ও ফলনশীল)
হাইব্রিড জাত যেমন ‘ইন্দমতি’, ‘অগ্নি’, যেগুলো থেকে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
বীজ বপন ও চারা রোপণ
মরিচের চারা সাধারণত বীজতলা তৈরি করে ৩০-৪০ দিনের মধ্যে রোপণযোগ্য হয়। বীজতলা
তৈরি করতে ১ মিটার প্রস্থ ও প্রয়োজনমতো দৈর্ঘ্যের বেড তৈরি করা হয়। প্রতি বর্গমিটার
বীজতলায় প্রায় ৫-৭ গ্রাম বীজ বপন করা হয়। চারা ৫-৬ পাতাবিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করা
যায়।
জমি প্রস্তুতি
মরিচের জমি ৪-৫ বার চাষ দিয়ে মিহি করে নিতে হয়। সাথে সাথে জমিতে ১০-১২ টন গোবর
সার মিশিয়ে দিতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি বিঘায় প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবস্থাপনা: ইউরিয়া: ৪৫-৫০ কেজি, টিএসপি:
৩০ কেজি, এমওপি: ২০ কেজি এর অর্ধেক ইউরিয়া ও সম্পূর্ণ টিএসপি ও এমওপি জমি প্রস্তুতের
সময় প্রয়োগ করা হয়। বাকি ইউরিয়া ২ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও নিড়ানি
শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ১০-১২ দিন অন্তর সেচ প্রয়োজন। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করা
উচিত যাতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত না হয়।
রোগবালাই দমন
লিফ কার্ল ভাইরাস: পোকা বাহিত রোগ। সাদা
মাছি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত কীটনাশক (ইমিডাক্লোপ্রিড) প্রয়োগ করতে হয়। ডাইব্যাক রোগ: আক্রান্ত গাছের শাখা কেটে পুড়িয়ে
ফেলতে হয়। ছত্রাকনাশক যেমন রিডোমিল বা ব্যাভিস্টিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ফসল সংগ্রহ
মরিচ ফুল ফোটার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে প্রথম মরিচ সংগ্রহ শুরু হয়। কাঁচা মরিচ ৭-১০
দিন অন্তর সংগ্রহ করা যায়। শুকনা মরিচের জন্য সম্পূর্ণ পেকে লাল হলে সংগ্রহ করতে হয়।
উৎপাদন ও লাভ
সঠিক যত্ন নিলে প্রতি বিঘা থেকে প্রায় ২০-২৫ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদন সম্ভব। এতে
প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়, যা খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা
লাভ থাকে।
কৃষকের মতামত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কৃষক জানান, “আগে ধান চাষে যা পেতাম, এখন মরিচ চাষ করে
তার চেয়ে দ্বিগুণ লাভ করছি। মরিচের দাম ভালো থাকলে সারা বছরই আমরা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য
পাই।”
উপসংহার:
মরিচ শুধু বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় মসলা নয়, দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে কৃষকরা এর থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক
সুবিধা পেতে পারে।