জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রয়োজন --মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
ঢাকা, ২১ অগ্রহায়ণ (৬ ডিসেম্বর):
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সরকারি পর্যায়ে ঝুঁকি মোকাবিলার তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় নারী উদ্যোক্তাসহ সকল উদ্যোক্তার জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা জলবায়ুকে মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের এই তহবিলের আওতায় অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আজ ঢাকায় লেকশোর হোটেলে ‘Voices for change : Putting Climate Action, Women Entrepreneurs, and SMEs, in Bangladesh’s Public Policy’-শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধন অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি মানে শুধু সংখ্যা বাড়ানো নয়; বরং তাদের দৃশ্যমানতা বাড়ানোই হবে মূল লক্ষ্য। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন- যদিও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে। তারপরও সুযোগের পরিধি এখনো যথেষ্ট নয়। কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের সুযোগ নিশ্চিত করার অধিকার তাদেরকেই নিতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টির সবচেয়ে বড় উৎস, যার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই নারীদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করে। একজন নারী উদ্যোক্তা নিজের সাথে আরো কয়েকজন নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেন। নারীর আর্থিক শৃঙ্খলার প্রশংসা করে তিনি বলেন, নারীরা ঋণ নিলে তা পরিশোধ করেন- এটা প্রমাণিত। তাই নারীদের ঋণ সহায়তা বাড়ানো উচিত।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ভূমিকম্প বড় আঘাত হয়তো একবার দেয়, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিদিনের সমস্যা। বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণে বড় অবদান না রাখলেও ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে আমরা প্রথম সাতটি দেশের মধ্যে একটি। তিনি কপ-৩০ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ব্রাজিলের বেলেমে জলবায়ু আলোচনায় নারীদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আসেনি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্য খাত। এর প্রভাবে নদী ও সাগরে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি সমুদ্রের বহু এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিজনিত অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, যা মৎস্যসম্পদের জন্য উদ্বেগজনক।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব নয় এমন কৃষি ও পশুপালন পদ্ধতিতে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গবাদিপশুর খাদ্যভ্যাস উন্নয়নের মাধ্যমে মিথেন কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । যদিও শিল্পায়িত দেশসমূহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইভস্টক প্রোডাকশনের কারণে অধিক হারে কার্বন নিঃসরণ করছে।
সেমিনারে বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের (এসএমই) কার্যকর অংশগ্রহণ এবং এসব খাতে টেকসই নীতি সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা জলবায়ু সহনশীল অর্থনীতি গঠনে নারীদের অবদান এবং এসএমই খাতের সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।