নাটোর রাজবাড়ীর ইতিহাস বর্ণনা

প্রতিষ্ঠা: ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে রামজীবন রায় নামক এক ব্রাহ্মণ জমিদার নাটোর রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে তাঁর দত্তক কন্যা রাণী ভবানী এই রাজবাড়ীর ইতিহাসে বিশাল প্রভাব ফেলেন।
রাণী ভবানীর সময়কাল:
রামজীবন রায়ের মৃত্যুর পর, তাঁর দত্তক কন্যা রাণী ভবানী জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব নেন।
তিনি ছিলেন সুদক্ষ শাসক, জনহিতৈষী ও ধর্মানুরাগী।
রাণী ভবানীর আমলে নাটোর রাজবাড়ির প্রভাব উত্তরবঙ্গ ছাড়িয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বহু মন্দির, রাস্তা, পুকুর, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। তাঁকে "বাংলার নবাব" উপাধি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:নাটোর রাজবাড়ি একটি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অবস্থিত, প্রায় ১২৩ একর জায়গা জুড়ে।
এর মধ্যে রয়েছে-দুইটি রাজপ্রাসাদ (উত্তর ও দক্ষিণ),বিশাল দিঘি (রাজবাড়ি দিঘি),নাট মন্দির, রাসমঞ্চ, সিংহদ্বার, দালানকোঠা, গুদামঘর ও অতিথিশালা।
স্থাপত্যে মুঘল ও ইউরোপীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: নাটোর রাজবাড়ি ব্রিটিশ আমলেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৪৭ সালের পর জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্ত হলে রাজবাড়ির মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণ সরকারি দায়িত্বে চলে যায়। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত।
বর্তমান অবস্থা:
রাজবাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
এখানে এখনও প্রতি বছর রাস উৎসব পালিত হয়, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
অনেক পর্যটক, গবেষক ও ইতিহাসপ্রেমী এখানে ভ্রমণে আসেন।
নাটোর রাজবাড়ী বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যনন্দিত জমিদার প্রাসাদ, যা রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলায় অবস্থিত। এটি রাজশাহী রাজ পরিবারের আবাসস্থল ও প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল এবং রাণী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত।
স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য
আয়তন: প্রায় ৫০ একর জমিতে নির্মিত এই প্রাসাদটি ১৮শ শতকে নির্মিত হয়।
স্থাপত্যশৈলী: নিওক্লাসিক্যাল ও মুঘল স্থাপত্যের সংমিশ্রণ।
উল্লেখযোগ্য অংশ: বড় তরফ ও ছোট তরফ: রাজবাড়ীটি দুটি ভাগে বিভক্ত।
দিঘি ও মন্দির: কমপ্লেক্সে ৬টি দিঘি এবং শ্যামসুন্দর, তারকেশ্বর শিব ও আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির রয়েছে।
প্রবেশদ্বার: পিরামিড আকৃতির চারতলা প্রবেশদ্বার, যার উপরে একটি ঘড়ি রয়েছে।
দর্শনার্থীদের জন্য তথ্য
'সময়সূচী: প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
প্রবেশমূল্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা, শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারে।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে: বাস বা ট্রেনে নাটোর পৌঁছে সিএনজি বা রিকশায় রাজবাড়ী।
রাজশাহী থেকে: প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে, বাস বা ট্রেনে সহজে পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা:
নাটোর শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও বোর্ডিং রয়েছে, যেমন:
হোটেল ভিআইপি:
সিংগেল কক্ষ ২৫০-৩০০ টাকা, ডাবল কক্ষ ৫০০-৬০০ টাকা। হোটেল রুখসানা: সুবিধাসম্পন্ন কক্ষ।
সার্কিট হাউস নাটোর: সরকারি অতিথিশালা।
খাবার ও স্থানীয় বিশেষত্ব
নাটোরের কাঁচাগোল্লা: বিখ্যাত মিষ্টান্ন, যা স্থানীয় দোকানে পাওয়া যায়।
স্থানীয় রেস্টুরেন্ট: ইসলামিয়া হোটেল, নয়ন হোটেল ইত্যাদি।