সুযোগ কাজে লাগায়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপ খেলতে চান বাংলাদেশের ফুটবল দল

ব্রাজিল বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ থাকবে এএফসি এশিয়ান কাপের ২১তম আসরে কোয়ার্টার
ফাইনালে ওঠা ৮ দলের। সুযোগটি কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশের ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা
খন্দকার।
বছরখানেক আগেও বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই ছিল সবচেয়ে মর্যাদার
প্রতিযোগিতা। তাঁরাই এখন ২০২৭ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় নারী বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন
দেখছেন!
আর সেই স্বপ্ন পূরণ খুব অসম্ভবও নয়। বাংলাদেশের
মেয়েরা যে পৌঁছে গেছেন দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ার সেরাদের মঞ্চে। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায়
অনুষ্ঠেয় ১২ দলের এএফসি এশিয়ান কাপের ২১তম আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ৮ দলের সুযোগ
থাকবে ২০২৭ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার। বাংলাদেশ সে সুযোগই কাজে লাগাতে চায়। অধিনায়ক
আফঈদা খন্দকারও সেটাই বলেছেন আজ বাফুফের পাঠানো ভিডিও বার্তায়, ‘সবাই যেভাবে আমাদের
সমর্থন করছেন, সেভাবেই করবেন। আমরা যেন আরো এগিয়ে যেতে পারি, সবাই দোয়া করবেন। দলকে
বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখতে চাই। যেহেতু আমাদের সামনে সুযোগটা এসেছে, আমরা অবশ্যই চেষ্টা
করব সেটা কাজে লাগাতে।’
আজ ইয়াঙ্গুনে প্রস্তুতিতেও ছিল সেই প্রতিচ্ছবি।
টানা দুই ঘণ্টার অনুশীলনের পরও নেই ক্লান্তির ছাপ। উল্টো উদ্যাপনের মেজাজে থাকা বাংলাদেশ
দলের অধিনায়ক বললেন তুর্কমেনিস্তান ম্যাচটাও ভালোভাবে শেষ করার কথা, ‘দলের সবাই ফুরফুরে
মেজাজে আছেন, আজ ভালোই অনুশীলন করলাম। আগামীকাল আমাদের শেষ ম্যাচ। ওই ম্যাচও ভালো করতে
চাই।’
যদিও দলে চোটের সমস্যা রয়েছে। তবে র্যাঙ্কিংয়ে
বাংলাদেশের (১২৮) চেয়ে পিছিয়ে ১৪১ নম্বরে থাকা তুর্কমেনিস্তানকে নিয়ে খুব একটা চিন্তার
কথাও নয় বাংলাদেশের। ম্যাচের আগে যেমনটা মনে করিয়ে দিয়েছেন গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আহমেদ,
‘ছোটখাটো কিছু চোট সমস্যা আছে, কোচ ওই সব খেলোয়াড়ের রিকভারি করার সময় দিয়েছে এবং বাকিদের
নিয়ে আমরা মাঠে কাজ করেছি। আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে মেয়েরা খুবই সিরিয়াস এবং মনোযোগী।
আমরাও তাদের প্রতিনিয়ত বলছি, আমাদের বাছাই এখনো শেষ হয়নি। ইনশাআল্লাহ, আগামীকালের ম্যাচে
জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে আমরা উদ্যাপনটা করতে চাই।’
গত মে মাসে জর্ডানে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলতে
যান মেয়েরা। সেটি ছিল এশিয়ান বাছাইয়ের প্রস্তুতি। সেই টুর্নামেন্টে চমক দেখিয়ে র্যাঙ্কিংয়ে
নিজেদের চেয়ে এগিয়ে থাকা দল জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ড্র করে বাংলাদেশ। তাতেই বাড়ে
আত্মবিশ্বাস, মিয়ানমারের মাটিতে সেই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে ইতিহাসেও স্থান করে নেন
বাংলাদেশের মেয়েরা। আফঈদা তাতে অনেক খুশি, ‘এই আনন্দ আসলে বলে বোঝানোর মতো নয়। বাংলাদেশ
নারী ফুটবল দল ইতিহাসে এই প্রথম এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে, এটা খুবই আনন্দের।’
২০২৪ সালের মার্চে মেয়েদের কোচের দায়িত্ব নেন পিটার বাটলার। এরপর গত অক্টোবরে নেপালে সাফ জেতে বাংলাদেশ। সেই সাফল্যের পর বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ১৮ নারী ফুটবলার। সেই বিদ্রোহ শেষে নতুন করে দল গড়ার কাজে মন দেন বাটলার। শুরুতে গত ফেব্রুয়ারিতে একেবারে তরুণ একটা দল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যায় বাংলাদেশ। সেখানে দুই ম্যাচেই হারলে কোচ বাটলারকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। কিন্তু বাফুফে তাঁর ওপর আস্থা রেখে যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ মিলেছে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই এশিয়ান কাপে বাছাই থেকে মূল পর্বের টিকিট কেটেছে বাংলাদেশ। তাই আগামীকাল তুর্কমেনিস্তান ম্যাচটি বাংলাদেশের কাছে কাগজে–কলমে আনুষ্ঠানিকতার। যদিও মেয়েরা শেষটা আরও সুন্দর চান।