নরসিংদীর লটকন: ঐতিহ্য থেকে অর্থনীতির রূপান্তর
নরসিংদী প্রতিনিধি:
লটকন গাছের সঠিক পরিচর্যা কৃষকের লাভের চাবিকাঠি। অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ার চারপাশের আগাছা পরিষ্কার করা, মাটি আলগা করা, পুরনো ও শুকনো ডাল ছাঁটাই করা এবং রোগ-পোকা দমন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, গাছের শিকড় সুস্থ রাখতে হালকা সার প্রয়োগ এবং নিয়মিত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসব পদক্ষেপ গাছের ফুল ও ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নরসিংদী জেলার লটকন (Artocarpus lakoocha) চাষ আজকাল শুধু ঐতিহ্য নয়, এটি কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলার কৃষকরা এই ফল চাষে নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছেন। তবে, চলতি বছর আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, যা কৃষকদের জন্য কিছুটা হতাশাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
নরসিংদী জেলায় বর্তমানে প্রায় ১৮০০ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৩২,৪০০ মেট্রিক টন ফলন আশা করা হচ্ছে। প্রতি গাছ থেকে ১৫-২০ কেজি ফলন পাওয়া যায় এবং প্রতি কেজি ফলের বাজারমূল্য ৮০-১৫০ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী, একটি গাছ থেকে বছরে ১,২০০-৩,০০০ টাকা আয় সম্ভব। কম খরচে অধিক লাভের কারণে অনেক কৃষক লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
নরসিংদীর লটকন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে লটকন রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হচ্ছে। গত বছর রপ্তানি আয় প্রায় ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে, চলতি বছর উৎপাদন কম হওয়ায় রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।
নরসিংদীর লটকন চাষ শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য নয়, এটি জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। লটকন বাগানগুলো গ্রামীণ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে লটকনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফল সহজেই বিক্রি করতে পারছেন, যা তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করছে।
নরসিংদীর লটকন চাষ একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষি উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, আবহাওয়া পরিবর্তন, রোগ-পোকা আক্রমণ এবং বাজারমূল্যের ওঠানামা কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। সরকারী সহায়তা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণার মাধ্যমে লটকন চাষের উন্নতি সম্ভব।