সংবাদ শিরোনাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছোট সোনা মসজিদের বিবরণ

 প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছোট সোনা মসজিদের বিবরণ

ছোট সোনা মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন, যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

নির্মাণ ও ইতিহাস:

সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৪-১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ) ওয়ালি মোহাম্মদ আলি নামক এক ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

স্থাপত্য  ও গঠন:

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট এবং প্রস্থ ৫২.৫ ফুট, এবং উচ্চতা ২০ ফুট। এর দেয়ালগুলো প্রায় ৬ ফুট পুরু, যা ইট

দিয়ে নির্মিত এবং পাথর দিয়ে আবৃত। মসজিদে মোট ১৫টি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে মাঝের সারির গম্বুজগুলো বাংলা চৌচালা আকৃতির।

অলংকরণ ও বৈশিষ্ট্য:

মসজিদের বাইরের অংশে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল, যা সূর্যের আলোতে সোনার মতো ঝলমল করত। এই কারণে মসজিদটির নামকরণ করা হয় "সোনা মসজিদ"।


সংলগ্ন স্থাপনা:l

মসজিদের প্রবেশপথের সামনে একটি তোরণ রয়েছে, এবং মসজিদের উত্তর দিকে একটি দিঘি অবস্থিত। এছাড়াও, মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং মেজর নাজমুল হক টুলুর কবর রয়েছে।

ভ্রমণ তথ্য:

মসজিদটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দর্শনার্থীরা সহজেই সড়কপথে মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারেন। 


নামকরণের ইতিহাস:


মসজিদটির ছাদ ও গম্বুজে এক সময় সোনার পাত দিয়ে অলংকরণ করা ছিল।


সূর্যের আলোতে এই সোনালি অংশ ঝলমল করত – সেখান থেকেই "সোনা মসজিদ" নামটি এসেছে।

যদিও এখন আর সেই সোনার পাত নেই, তবে নামটি রয়ে গেছে ঐতিহ্য হিসেবে।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:

মসজিদটি চুনা পাথর ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মিত।

রয়েছে ১৫টি গম্বুজ, যার মধ্যে মাঝখানের গম্বুজগুলো তুলনামূলক বড়।

৫টি প্রবেশপথ, সামনের দিকে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন দরজা রয়েছে।

মিহরাব (প্রার্থনার দিকচিহ্ন) মার্বেল পাথরে খোদাই করা ও ফুল-লতা অলংকরণে ভরা।

ভেতরের গঠন:

ভেতরে একটি বড় হলঘর রয়েছে, যেটা পাঁচটি সারিতে ভাগ করা।

ভিতরের দেয়ালে রয়েছে চমৎকার আরবিক ক্যালিগ্রাফি ও ফুলের নকশা।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:

সুলতানি আমলে এটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি উপাসনালয়।

এখনও স্থানীয় মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করে থাকেন।

এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

প্রতিদিন বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক মসজিদটি দেখতে আসেন।

আশেপাশে রয়েছে:l

বারো দুয়ারী (নবাবি দরবার ভবন)

তাহখানা প্রাসাদ,

ফরহাদ খান এর মাজার,

দারাসবাড়ী মসজিদ — সবই গৌড়ের ঐতিহ্যের অংশ।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

প্রবেশ মূল্য: সাধারণত ফ্রি, তবে বিদেশিদের জন্য কিছু নির্ধারিত চার্জ থাকতে পারে।

খোলা সময়: সকাল ৯টা – সন্ধ্যা ৬ট

যাওয়ার উপায়: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে অটো/রিকশায় যাওয়া যায়।

উপসংহার:

ছোট সোনা মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি বাংলাদেশের সুলতানি আমলের স্থাপত্যশিল্পের জীবন্ত নিদর্শন। ইতিহাস, শিল্প এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য একসঙ্গে মিশে আছে এখানে।