সংবাদ শিরোনাম

সাতগম্বুজ মসজিদের ঐতিহাসিক বর্ণনা

 প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

সাতগম্বুজ মসজিদের ঐতিহাসিক বর্ণনা

সাত গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক নিদর্শন। এটি ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর এলাকায় অবস্থিত। এই মসজিদটি মুগল আমলে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বাংলাদেশের প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোর একটি। নিচে এর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

ঐতিহাসিক পটভূমি:

সাত গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বুভন মোহাম্মদ খান। তিনি ছিলেন মুগল সুবেদার শাহ শুজার সময়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি ১৭ শতকের মাঝামাঝি (প্রায় ১৬৮০ সালের দিকে) নির্মিত হয়।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:

1. গম্বুজের সংখ্যা:

মসজিদের নামের সাথে মিল রেখে এতে সাতটি গম্বুজ আছে— তিনটি সামনের সারিতে এবং চারটি কোণায়।

2. নকশা ও শৈলী:

মসজিদটি মুগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। এতে লাল ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং বাইরের দেয়ালে চুনসুরকি দ্বারা অলঙ্করণ করা হয়েছে।

3. প্রবেশপথ:

মসজিদের সম্মুখভাগে তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, প্রতিটি দরজার ওপরে একটি করে অর্ধগোলাকৃতির খিলান আছে।

4. মিহরাব:

মসজিদের অভ্যন্তরে পশ্চিম দিকে একটি বড় মিহরাব রয়েছে, যার চারপাশ সুন্দরভাবে অলঙ্কৃত।

5. মিনার:

যদিও বড় কোনো মিনার নেই, তবে মসজিদের কোণাগুলিতে মিনার সদৃশ গম্বুজাকৃতির স্তম্ভ দেখা যায়।

ধর্মীয় গুরুত্ব:

এই মসজিদটি শুধু ধর্মীয় উপাসনার জন্য নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মুসল্লি এখানে জুমার নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালন করেন।

সংরক্ষণ ও গুরুত্ব:

বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনস্থ একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। মসজিদটি পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং অনেক শিক্ষার্থী ও গবেষক ইতিহাস জানার জন্য এটি পরিদর্শন করেন।

স্থাপত্য বিশ্লেষণ:

1. গম্বুজের বিন্যাস:

মসজিদের মূল কক্ষের ওপর তিনটি গম্বুজ সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

কোণাগুলোতে চারটি ছোট গম্বুজ সংযুক্ত আছে, প্রতিটি একটি করে কোণায় স্থাপন করা হয়েছে।

এই সাতটি গম্বুজের জন্যই এর নামকরণ হয়েছে "সাত গম্বুজ মসজিদ"।

2. ইটের কাজ ও অলংকরণ:

মসজিদটির দেয়াল লাল ইটের তৈরি হলেও বাইরের অংশে সাদা চুন-সুরকি ব্যবহার করে বিভিন্ন কারুকাজ করা হয়েছে।

দরজার খিলান ও মিহরাবের চারপাশে ফুল-লতা, জ্যামিতিক নকশা এবং সূক্ষ্ম অলংকরণ রয়েছে।

3. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অবস্থান:

মসজিদটি একটি উঁচু চত্বরের ওপর নির্মিত।

পাশেই আছে একটি প্রাচীন কবরস্থান, যেখানে বুভন মোহাম্মদ খান ও তাঁর পরিবারের কবর রয়েছে।

কাছেই আছে একটি প্রাচীন পুকুর, যা মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:

মসজিদটি শুধু উপাসনার স্থান নয়, বরং এটি মুঘল আমলের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।

স্থানীয় জনগণ এই মসজিদকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং এটি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের অংশ হয়ে গেছে।

সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ:

বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে।

মসজিদের কিছু অংশে সংস্কার করা হয়েছে মূল নকশা বজায় রেখেই।

বিভিন্ন পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এর চারপাশের পরিবেশ উন্নত করার কাজ চলছে।

শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব:

ইতিহাস, স্থাপত্য এবং মুঘল আমলের গবেষকদের কাছে সাত গম্বুজ মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়।

শিক্ষার্থীরা মুঘল স্থাপত্যরীতি বুঝতে এর তুলনা করে থাকে লালবাগ কেল্লা, হোসেনি দালান, আর জিনজিরা প্রাসাদের সঙ্গে।