আগামী বছর চামড়া সংরক্ষণের আগ্রহ আরো বাড়বে- বাণিজ্য উপদেষ্টা

ঢাকা, ২২ শ্রাবণ (৬ আগস্ট):
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, এ বছর যারা চামড়া সংরক্ষণ করেছে তারা পরবর্তীতে ভালো দাম পেয়েছে। এবার যারা চামড়া সংরক্ষণ করেননি, আর যারা করেছেন, তাদের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এবারের মতো আগামী বছরও চামড়া সংরক্ষণে সহযোগিতা করলে মানুষ এতে অনেক বেশি অংশগ্রহণ করবে।
উপদেষ্টা আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির তৃতীয় সভায় এসব কথা বলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, ঈদুল-আজহা উপলক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। এ বছর ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং স্থানীয় ট্যানার্স কর্তৃক ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ২২০টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংরক্ষণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১৫ লাখ ৪৮ হাজার পিস। এরপর ঢাকায় ১৪ লাখ ৯ হাজার, রাজশাহী ১৩ লাখ ৯০ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বৈঠকে এ বছর কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো: কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা; অননুমোদিত হাট অপসারণ এবং বিক্রিত পশুর হাসিল আদায়ের হার; কোরবানিদাতা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ; এলাকাভিত্তিক পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট স্থান ও অবকাঠামো স্বল্পতা; চামড়া সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যথাযথ জ্ঞান না থাকা; কোরবানির বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; বিদ্যমান ট্যানারিসমূহের সক্ষমতা ও কমপ্লায়েন্স ইস্যু; কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ক কোনো বিদ্যমান নীতিমালা না থাকা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের স্থায়ী অবকাঠামোর অভাব।
বৈঠকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী কোরবানি ঈদেরর জন্য কমিটি কয়েকটি সুপারিশ করে। সেগুলো হলো:
কোরবানি পশুর হাট দক্ষভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করা; কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি STANDARD OPERATING PROCEDURE (SOP) প্রণয়ন করা এবং তা অনুসরণের জন্য সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা প্রদান করা; কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করা; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ এবং অন্যান্য যে কোনো রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো; জেলা অনুযায়ী স্থায়ী ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ও পশু জবাইকারীদের (কসাই) একটি ডাটাবেজ তৈরি করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সিইটিপি/ইটিপিসমূহকে কোরবানির সময় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী করে গড়ে তোলা; চামড়া সংরক্ষণকারী ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার অদূরে চামড়া সংরক্ষণের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।
বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।