সংবাদ শিরোনাম

শিল্পকলায় চলছে মনসুন রেভ্যুলেশন স্পিরিট উপজীব্য জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব ২০২৫

 প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:০২ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

শিল্পকলায় চলছে মনসুন রেভ্যুলেশন স্পিরিট উপজীব্য জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব ২০২৫

ঢাকা, ১৭ শ্রাবণ (১ আগস্ট):

জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্য উৎসব -২০২৫ ‘নাটকের ভাষায় ইতিহাসের পুনর্জন্ম’ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় শিল্পকলায় চলছে মনসুন রেভ্যুলেশন স্পিরিট উপজীব্য ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব ২০২৫’। ৯ দিনব্যাপী এই উৎসব চলবে আগামী ৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত। উৎসবে অংশ নিচ্ছে দেশের ১১টি খ্যাতনামা নাট্যদল, যারা পরিবেশন করবেন ১১টি ভিন্নধারার নাটক। প্রত্যেকটি নাটক নির্মিত হয়েছে ২০২৪ সালের আন্দোলন ও সমকালীন সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে।

নাট্য উথসবে উপস্থিত থেকে নাটক উপভোগ করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির, প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক এ এফ এম নুরুর রহমান, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন প্রমুখ।

নাট্য উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক সুমন এবং পরিবেশনায় থাকবে ‘তীরন্দাজ রেপার্টরী’। 

একই সময় পরীক্ষণ থিয়েটারহলে মঞ্চায়ন হয় নাটক ‘দেয়াল জানে সব’। প্রযোজনাটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন  শাকিল আহমেদ সনেট এবং পরিবেশন করবে ‘স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল’।


‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের সারসংক্ষেপ থেকে জানা যায়, জুলাই! এক দুঃসহ সময় আমাদের একত্রিত করেছিলো। আবু সাঈদের প্রসারিত দুইহাত থেকে অজপাড়াগায়ের হৃদয় তরুয়ার শহীদি মৃত্যু আমাদেরকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে, আমরা স্বৈরাচারের বিশাল পাথর আমাদের ঘাড় থেকে নামাতে পেরেছি। সেরকমই এক জীবন আমাদের নাটকের শুভঙ্করের। সে’ও এই একই ভোগবাদী সমাজের স্বপ্ন ও বাস্তবতার বিস্তর ফারাক নিয়ে বড় হয়ে উঠা একজন নতজানু নাগরিক। যেই জীবনের বেশীরভাগ জুড়েই আছে সয়ে যাওয়ার ইতিহাস, আছে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। সেই জীবন শুভঙ্কর ও তার পিতা-মাতাকে হতাশ করে-তাদের স্বপ্ন থেকে তাদেরকে বিচ্ছিম্ন করে। তবুও শুভঙ্কর স্বপ্ন দেখতো এক বৈষম্যবিহীন সময়ের। সে অনুভব করতো সেই সময় নির্মাণ এমনি এমনি হয়না- তার জন্য লড়াইটাও করতে হয়।

সময়ের প্রয়োজন যখন উপস্থিত হয়, আমাদের শুভঙ্কর ঠিকই হাজির হয় রাজপথে। অনেক না পাওয়ার গ্লানি ও অসংখ্য আকাঙ্খার জমিনে দাঁড়িয়ে শুভঙ্কর অন্যদের মতোই স্বৈরাচারের গুলির সামনে স্লোগানে কন্ঠে জোর লাগায় এবং যুদ্ধের চিরাচরিত নিয়ম সম্ভবত এই যে, কেউ পুড়ে যায় বলেই কেউ আলো পায়। আর সেই নিয়মেই সম্ভবত ভীড়ের ভেতর শুভঙ্কর হয়তোবা হারিয়ে যায় অথবা আমরাই হয়তো হারিয়ে ফেলি শুভঙ্করকে। আর আমরা যারা হারাইনা তারা হয়তো সময়ের পরিক্রমায় শুভঙ্করদের নিয়ে বিস্মৃত হই। তবুও কেউ কেউ থাকে, যারা বিস্মৃত হয়না- যারা স্মৃতিকে আকড়ে ধরে জীবন্ত রাখে শুভঙ্করদের। তেমনই এক স্মৃতি আকড়ে আছে আমাদের নাটকের আরেক চরিত্র নীলা। এই নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমরা শুধু স্মৃতিকে স্মরণ করতে চাইনা, বিজয়কে উদযাপন করতে চাইনা। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, সকল হারিয়ে যাওয়া জীবনের প্রতি আমাদের দায় আছে। সেই দায় আমরা পালন করবো।

নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিলয় কুমার বিশ্বাস, সারাহ মীম, সাগর মৈত্রী, ফারজানা মেহেজাবীন, কৌশিক আহমেদ, মাহিমা সাদিক লিমা, সাদিয়া শাহীন অন্তু, মানসিফ তাজরিয়ান, বাপ্পি হায়দার, সোনালী কবির, মো: আবদুল্লাহ আল নোমান, মো. সাজাওয়ার হোসেন অরণ্য, সানজিদ ইসলাম তূর্য, সামিয়া চৌধুরী, আল ওয়ালীদ জিয়ান, বাপ্পী হায়দার, দীপক সুমন।

এই প্রযোজনার নেপথ্য কলাকুশলী হিসেবে ছিলেন নাট্যরূপে ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, সহকারী নির্দেশনায় মুনিরা মাহজাবিন মিমো, শব্দ ও সংগীত পরিকল্পনায় রবিউল ইসলাম শশী, শব্দ ও সংগীত প্রক্ষেপণে নোমান, অরণ্য, মানসিফ ও তূর্য, কোরিওগ্রাফিতে সারাহ মীম, আলোক পরিকল্পনায় মোখলেসুর রহমান, পোশাক পরিকল্পনায় এনাম তারা সাকি, প্রপসে সানজিদ ইসলাম তূর্য, পোস্টার ডিজাইনে রফিক উল্যাহ এবং মিলনায়তন ব্যবস্থাপনায় রমিন মজুমদার, আহসান, যোশীয় জয়দেব দাশ, আশফাক আহমেদ অনিক, দীপ্ত কর্মকার, অর্ক, ইশরাত জেরিন নিতু, অমৃতা জামান ও নিশান সিয়াম।

‘দেয়াল জানে সব’ কাহিনি সংক্ষেপ দেখা যায়, নীরব দেয়ালও কথা বলে, কান পেতে শোনে শহরের প্রতিটি হাঁক, প্রতিটি নিশ্বাস, প্রতিটি মৃত্যু। ‘দেয়াল জানে সব’- একটি সময়ের দলিল, এক মহাকাব্যিক বয়ান, যেখানে শহরের ধূসর বাতাসে ভেসে বেড়ায় গুলির শব্দ, কান্নার ধ্বনি, অসমাপ্ত স্বপ্নের ছিটেফোঁটা। নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে এক একটি কফিন চতুর্ভুজাকৃতির মৃত্যুপরিচয় নির্মম বাস্তবতার সীমানা পেরিয়ে প্রতীয় হয়ে ওঠে। রিকশাচালক রহিমুদ্দিনের স্তব্ধ গতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ নাজিমের বিপ্লবী স্বপ্ন, গার্মেন্টসকর্মী আসমার সুবিন ক্লান্ত শরীর, শিশু নাইমের উড়তে চাওয়া খেলনা হেলিকপ্টারের ছিন্নপাখা, হাসপাতালের করিডোর নিথর শয্যায় কাতর আন্দোলনকারীরা সব মিলিয়ে ভয়াবহ, অথচ জ্যোতিময় ক্যানভাস।

এই নাটক কেবল মৃত্যু আর শোকের কাহিনী নয়। এটি এক মহাকালের পাথেয়, যেখানে লুকিয়ে থাকে আশার আলোপথ, নবজাগরণের ছাপ। দেয়াল জানে যে, প্রতিটি রক্তবিন্দু নিষ্ফল যায় না। জানে যে প্রতিটি মৃত্যু চোখের পেছনে লুকানো থাকে এক নবজন্মের সম্ভাবনা। নাটকের প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি দৃশ্য যেন এক এক খন্ড কাব্য; প্রতিটি আলোছায়া, সঙ্গীত, শব্দ যেন এক এক বিন্দু অশ্রুজল, যা ছুঁয়ে যায় দর্শকের গভীর অনুভূতিতে।

‘দেয়াল জানে সব’ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিতাদিত্য বড়ুয়া, জয়ন্ত ত্রিপুরা, আকাশ মিয়া, নুসরাত জাহান, কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন, নারিন আফরোজ লিনসা, রাহুল, মো: সবুজ, আলিফ মাহমুদ, মেজবা মাহবুব রাফিল, সিয়াম শুভ, আসিফ হোসেন, সয়েম ও ফাহাদ।

নেপথ্যক্রিয়ায় ছিলেন সেট ও প্রপস পরিকল্পনায় উৎপল নীল, গীতিকার হিসেবে শাকিল আহমেদ সনেট, সুর ও সংগীত পরিকল্পনায় অর্পা খন্দকার চাঁদনী, আবহ সংগীত ও কোরাসে হৃদিক জাহান ও শীতল বিশ্বাস, পোশাক পরিকল্পনায় শাকিল আহমেদ সনেট ও উৎপল নীল, কোরিওগ্রাফিতে কৃষ্ণ ও জয়ন্ত, আলোক প্রক্ষেপণে বাপ্পি, পোশাক তৈরীতে আমিনুল ইসলাম এবং প্রযোজনা ব্যবস্থাপনায় জিতাদিত্য বড়ুয়া।

আগামীকাল ০২ আগস্ট ২০২৫, শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘দ্রোহের রক্ত কদম’। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন ইরা আহমেদ এবং নাট্য প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ করবে ‘এথেরা’। 

নাট্য প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রদর্শনীর পূর্বে প্রবেশপত্র কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করা যাবে