সংবাদ শিরোনাম

ইসলামী নববর্ষ: আত্মশুদ্ধির নতুন সূর্যোদয়

 প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

ইসলামী নববর্ষ: আত্মশুদ্ধির নতুন সূর্যোদয়

আজ থেকে শুরু হলো হিজরি ১৪৪৭ সাল। এটি মুসলিম উম্মাহর পঞ্জিকা অনুযায়ী একটি নতুন বছরের সূচনা, যার ভিত্তি প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহান হিজরত। ইসলামি বর্ষপঞ্জির এই দিনটি কেবল একটি ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত দেয় না, বরং আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মশুদ্ধির এক অপূর্ব সুযোগও এনে দেয়।

 

ইতিহাসের পটভূমি

হিজরি বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দে, যখন প্রিয়নবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। এটি ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনাযা শুধু একটি ভৌগোলিক স্থানান্তর নয়, বরং একটি নতুন সভ্যতা ও মূল্যবোধ নির্ভর রাষ্ট্রের সূচনা। এই হিজরতই ইসলামী নববর্ষের মূল তাৎপর্য।

 

নববর্ষ মানেই উৎসব নয়

পশ্চিমা বা বাংলা নববর্ষের মতো হিজরি নববর্ষে জাঁকজমকপূর্ণ আনন্দ-উল্লাস নেই। নেই আতশবাজি কিংবা বাহারি উৎসবের আমেজ। কারণ এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ত্যাগ, ধৈর্য, সংগ্রাম এবং আত্মনিবেদনের প্রতিচ্ছবি। তাই হিজরি নববর্ষ মূলত অন্তর্মুখী একটি উপলক্ষনবচিন্তা, নৈতিক পরিবর্তন এবং আত্মশুদ্ধির আহ্বান।

 

আত্মসমালোচনার আহ্বান

ইসলামী নববর্ষ আমাদের মনে করিয়ে দেয়: গত বছর আমরা কী করেছি, কী হারিয়েছি, আর কী পেয়েছি? পাপ-পুণ্যের হিসাব কষে আমরা নিজের সাথে নিজের একটা আত্মিক চুক্তিতে পৌঁছাতে পারি। হোক না এবারের সংকল্পজীবনটা হোক আল্লাহভীতি, মানবতা ও সচ্চরিত্রের আলোকে পরিচালিত।

 

একটি সমাজ সচেতন বার্তা

আজকের দুনিয়ায় ধর্মীয় অনুশাসনকে আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। অথচ হিজরি নববর্ষ আমাদের শেখায় সামাজিক দায়িত্ব, শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণ এবং একে অপরের কল্যাণে এগিয়ে আসার কথা। একেকটি হিজরি বছর আমাদের সুযোগ করে দেয়আমাদের পরিবার, সমাজ ও জাতিকে আলোর পথে এগিয়ে নিতে।

 

রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে হিজরি নববর্ষ রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন গুরুত্ব পায় না। যদিও ইসলামিক ইতিহাসে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবু সরকারিভাবে এর গুরুত্ব ও গণসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হিজরি সনভিত্তিক বার্ষিক ক্যালেন্ডার চালু করা ও এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের দাবি।

 

 উপসংহার

ইসলামী নববর্ষ এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সময় বড়ই ক্ষণস্থায়ীএকে আল্লাহর নির্দেশনার আলোকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। আসুন, হিজরি ১৪৪৭ সাল আমাদের জন্য হোক আত্মশুদ্ধি, ন্যায়, মানবতা ও আলোকিত সমাজ গঠনের সূচনা বছর।