সংবাদ শিরোনাম

সমুদ্র দিবস: নাবিকদের স্বীকৃতি ও নৌখাতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা

 প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

সমুদ্র দিবস: নাবিকদের স্বীকৃতি ও নৌখাতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা

আজ ২৫ জুন, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক সমুদ্র দিবস’। জাতিসংঘের আওতাধীন আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (IMO) ২০১০ সাল থেকে দিনটি পালন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য— “Navigating the future: safety, sustainability, and seafarers” — যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষত বর্তমান বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট এবং টেকসই উন্নয়নের আলোকে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ দিবসটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বন্দর ও সামুদ্রিক পরিবহন খাতের অবদান অপরিসীম। প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি নাবিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক জাহাজে কাজ করছেন। তাদের শ্রম, দক্ষতা ও আত্মত্যাগের ফলেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় অংশ অর্জিত হয়, যা রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতির জন্য এক অনিবার্য উৎস।

তবে নাবিকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এখনও পর্যাপ্ত নয়। এখনও অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত, ন্যায্য বেতন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তাদের অধরা। নানা অনিয়ম, দালালচক্রের প্রতারণা, এবং জাহাজ মালিকদের দায়িত্বহীনতাও এ খাতে সংকট তৈরি করছে। সাম্প্রতিক সময়েও দেখা গেছে, বিদেশি বন্দরে আটকেপড়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে জাহাজডুবিতে বহু নাবিকের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়ে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র দূষণ, প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন— সবকিছুই নৌপরিবহন খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ এনে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে IMO-এর এ বছরের আহ্বান যথার্থ। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো নাবিককে সমুদ্রে পাঠানো উচিত নয়। পাশাপাশি কার্বন নির্গমন হ্রাস করে পরিবেশবান্ধব জাহাজ পরিচালনার দিকে আরও জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই দিনটি উপলক্ষে একটি সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নেওয়া— যেখানে নাবিকদের জীবনমান, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ থাকবে।

একটি সমুদ্রনির্ভর উন্নয়ন পরিকল্পনা, সমুদ্র অর্থনীতি (blue economy) বিকাশ এবং বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক জাহাজ চলাচলের সুযোগ কাজে লাগাতে হলে, আমাদের প্রথম দায়িত্ব হতে হবে— যারা সমুদ্রকে জীবিকার মাধ্যম করেছেন, সেই নাবিকদের প্রতি পূর্ণ সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

পরিশেষে বলা যায়, আন্তর্জাতিক সমুদ্র দিবস শুধু উদযাপনের দিন নয়, বরং এটি একটি আত্মবিশ্লেষণের সময়। আমরা কীভাবে আমাদের নাবিকদের পাশে দাঁড়াচ্ছি, তারা কতটা নিরাপদ— সেটাই এই দিবসের কেন্দ্রে থাকা উচিত।