খুলনার বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লাভে গড়ছে দৃষ্টান্ত
খুলনা ব্যুরো প্রধান :
যে সময় দেশের অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার লড়াই করছে, সে সময় খুলনার শিরোমণি শিল্প এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান নীরবে বদলে দিচ্ছে সেই চিত্র। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড (বিসিআইএল) গত পাঁচ বছরেই ১৪৮ কোটি টাকা মুনাফা করে রাষ্ট্রীয় শিল্পখাতে এক বিরল সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত এই কারখানায় উৎপাদিত টেলিকম কপার ক্যাবল বর্তমানে দেশের শতভাগ চাহিদা পূরণ করছে। এখন বিদেশে রপ্তানির প্রস্তুতিও নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরেই প্রতিষ্ঠানটি ওয়াসার উপযোগী এইচডিপিই/এইচডিডি পাইপ উৎপাদনের মেশিন এবং ইন্টারনেট ও ল্যান নেটওয়ার্কের জন্য ল্যান ক্যাবল প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। লক্ষ্য—২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই উৎপাদনে যাওয়া। এর মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের শতভাগ চাহিদা পূরণের আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব অর্থায়নে কারখানার ছাদে রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপন করতে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ ব্যয় কমার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
বিসিআইএল ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ ও টেলিকম খাতে আরও বড় অবদান রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।অপটিক্যাল ফাইবার উৎপাদন বছরে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কিলোমিটার , এইচভিপিই টেলিকম ডাক্ট ৬,৫০০ থেকে ৮,০০০ কিলোমিটার এবং সুপার এনামেল কপার ওয়্যার ৩০০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন ।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) এনামুল হক বলেন, আমাদের প্রতিটি পণ্য বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট ও এমআইএসটি’র পরীক্ষাগারে গুণগত মান যাচাইয়ের পর অনুমোদিত হয়। আমরা ৯৯.৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ কপার এবং বিশ্বমানের অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল কোর ওয়্যার ব্যবহার করি।”
এনামুল হক আরও বলেন, “বাংলাদেশে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার জন্য অন্তত পাঁচ লাখ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে রয়েছে মাত্র দেড় লাখ কিলোমিটার, যার ৭৫ শতাংশই ওভারহেড। নিরাপদ ও টেকসই সংযোগের জন্য নেটওয়ার্কগুলো মাটির নিচে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে এসে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন,পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন অর্জন করলে এখানকার উৎপাদিত পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু আরও বাড়বে।
এই পরামর্শের পর বিসিআইএল ইতোমধ্যে সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক সনদ প্রাপ্তির কার্যক্রম শুরু করেছে।১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের উদ্যোগে পশ্চিম জার্মানির সিমেন্স এজি’র সঙ্গে যৌথভাবে ৩২ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনার এই কারখানা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে এটি কপার ক্যাবল উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে অপটিক্যাল ফাইবার, ২০১৬ সালে এইচভিপিই টেলিকম ডাক্ট এবং ২০১৯ সালে বৈদ্যুতিক কন্ডাক্টর উৎপাদন শুরু হয়।